আগামী এক মাসের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত, দল গঠনের আগে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শ গ্রহণ করতে চান; মাহফুজ আলম, সমন্বয়ক
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দুইদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বৈত প্রাধান্য কমিয়ে আনতে এবং রাষ্ট্র সংস্কার করতে নিজেদের রাজনৈতিক দল আনার চিন্তাভাবনা করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে হটানোর পর দ্রুত নির্বাচন ও অন্যান্য ইস্যুতে নিজেদের চাওয়া পূরণে এই দল আনা হবে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন চার সমন্বয়ক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতাদের আশা, শেখ হাসিনা যেভাবে গত ১৫ বছর দেশ শাসন করেছেন তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এই দল আনা প্রয়োজন। সূত্রঃ রয়টার্স
গত জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। যা একপর্যায়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেয়। মূলত বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনা সরকার ব্যাপক সহিংসতার আশ্রয় নিলে এই আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে এবং প্রায় ৩০০ জন নিহত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে এর চেয়ে বড় আন্দোলন আর ঘটেনি। বিশ্লেষকেরা এই আন্দোলনকে জেন-জির আন্দোলন বলে ব্যাপক প্রশংসা করেন।
সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় এবং তারপর শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারে ছাত্রদের পক্ষ থেকে দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গত তিন দশকের বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশ শাসিত হয়েছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বা তার প্রতিদ্বন্দ্বী বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) হাতে। এই দুই নেতার বয়সই ৭০ বছরের বেশি। সর্বশেষ আন্দোলনের ছাত্রনেতারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুই অবসান ঘটাতে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছেন বলে জানিয়েছেন মাহফুজ আলম। তিনি ছাত্রদের পক্ষ থেকে সরকার, শিক্ষক, অধিকারকর্মী ও সামাজিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যোগাযোগের লক্ষ্য গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সভাপতি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি জানিয়েছেন, দল গঠনের আগে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে চান।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষ সত্যিই ক্লান্ত। আমাদের ওপর তাদের (সাধারণ মানুষের) আস্থা আছে।’
তাহমিদ চৌধুরী নামে আরেক সমন্বয়ক জানান, তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার ‘উচ্চ সম্ভাবনা’ আছে। তারা এখনো নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। তবে তিনি জানিয়েছেন, তারা যদি দল গঠন করতে, তবে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাকস্বাধীনতাকে তাদের মূলনীতি করবেন।
তিনি বলেন, ‘দুই দলের প্রাধান্য ভাঙতে এ ছাড়া আমাদের সামনে দ্বিতীয় আর কোনো পরিকল্পনা নেই।’
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আন্দোলনের চেতনা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী ফিরে আসতে পারবে না। এটি নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন এবং এটি করতে কিছু সময় লাগবে।’ তবে তিনি কোনো রূপরেখা দেননি।
নাহিদ ইসলাম জানান, নির্বাচন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যে আহ্বান জানাচ্ছে, সে বিষয়টি সরকার এখনই বিবেচনা করছে না।এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ছাত্ররা তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। তিনি বলেন, ‘তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হতে যাচ্ছে। কারণ, আমরা মূলত তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতি থেকে বাইরে রেখেছিলাম।’
এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এখন অজানা নদীতে এসে পড়েছি। সেটা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবেও। এই অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা কেমন হবে তাও বলা যাচ্ছে না। কেননা এই সরকার আইন মেনে হয়নি।’
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশ্লেষক রয়েছেন।
এ বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল কোথাও যাচ্ছে না। তাদের উৎপাটন করা যাবে না। এখন হোক কিংবা পরে, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সহযোগিতা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া কেউ বাংলাদেশে স্থিতিশীল অবস্থা আনতে পারবে না।’