জাতিসংঘের প্রায় সব মৌলিক চুক্তির অংশীদার বাংলাদেশ। তবে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সংস্থাটির ‘গুম থেকে রক্ষার আন্তর্জাতিক কনভেনশন’-এ স্বাক্ষর করেনি। মানবাধিকার ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার ‘গুম থেকে রক্ষার আন্তর্জাতিক কনভেনশন’-এ স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আশা করা হচ্ছে, খুব দ্রুতই জাতিসংঘের গুম বিষয়ক কনভেনশনে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চাওয়া, দেশের মানবাধিকার সংস্থাকে কার্যত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। এছাড়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রাখা হবে কি হবে না, তা নিয়েও ভাবছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। একটি সূত্র জানায়, মো. তৌহিদ হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা এবং বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই দুই বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বর্তমান সরকার মানবাধিকারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ নিয়ে গত কয়েক বছরে বেশ সমালোচনা করে গেছে। কিন্তু যারা ক্ষমতায় ছিলেন সেই অর্থে মানবাধিকার বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। যার ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হয়েছে।
সেজন্য বর্তমান সরকার মানবাধিকার ইস্যুকে প্রাধান্য দেবে। সেজন্য ‘গুম থেকে রক্ষার আন্তর্জাতিক কনভেনশন’-এ স্বাক্ষর করা হবে। শুধু তাই নয়, অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার সংস্থাকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে চায়। আর আমলাদের মানবাধিকার সংস্থার দায়িত্ব না দিয়ে যারা সংগঠক (অ্যাক্টিভিস্ট) তাদের দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল বা সংশোধনের কথাও চিন্তা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) বাংলাদেশ অংশের পর্যালোচনা গত বছরের (২০২৩) নভেম্বরে জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয়। ওই পর্যালোচনায় বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে ১১০টি দেশ ৩০১টি সুপারিশ পেশ করে। সুপারিশের মধ্যে গুম বিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করার পরামর্শ ছিল।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের চারদিন পর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রথম ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন। ওই ব্রিফিংয়ে পশ্চিমা কয়েকজন কূটনীতিক অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকারের বিষয়ে কেমন অগ্রাধিকার দেবে জানতে চেয়েছে।
কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের পর এ তথ্য উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন নিজে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, কূটনীতিকদের ডেকে মানবাধিকার নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, মানবাধিকার নিয়ে আমরা সিরিয়াস। আমরা বলেছি, কারও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হোক, সেটি আমরা চাই না।
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শত শত মানুষ হয় বিচার বহির্ভূত হত্যা অথবা গুমের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এসব অভিযোগকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অনবরত বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে কথা বলে আসছে। যদিও, তৎকালীন সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের কথা বরাবরই অস্বীকার করে গেছে।