ভারী বর্ষান এবং উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল এবং কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যায় দেশের ১২ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে।
এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, নোয়াখালীতে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। ১২ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি।
আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে তিন হাজার ৫২৭টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন আশ্রয় নিয়েছে।
গতকাল সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান এসব তথ্য জানান।
এদিকে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানের ভারতীয় অংশে বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমেছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ জেলা ফেনীতে একটি ত্রাণ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ৬০ বছর বয়সী লুৎফন্নেহার বলেন, “আমার বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ডুবে গিয়েছে।
“আমাদের ছাদের উপর দিয়ে পানি উঠে গেসে । আমার ভাই নৌকায় করে আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। সে না থাকলে আমরা মারা যেতাম।”
ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে মহাসড়ক ও রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানের ভারতীয় অংশে বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমেছে।
এতে দেশের উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় আজ রবিবার সকাল পর্যন্ত এই উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সচিব কামরুল হাসান জানান, ভারি বর্ষণ কমেছে। বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে উন্নতি হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে পানিবাহিত রোগবালাই প্রতিরোধের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
চলমান বন্যা পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য জানাতে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডাকে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। এ সময় সচিবের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা এবং দুর্যোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বন্যাপীড়িত মানুষের চিকিৎসাসেবাসহ অন্য সেবা সরেজমিনে তদারক করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম এখন ফেনীতে অবস্থান করছেন বলে জানান সচিব।