বরিশাল নগরীর বটতলা এলাকায় একটি বাড়ির নির্মাণ কাজের বিরোধ মীমাংসাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই প্রতিষ্ঠানের অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮২ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছয়টি বাসসহ বিএম কলেজের বিভিন্ন স্থাপনা হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বরিশাল নগরীর ব্যাপটিস্ট মিশন রোডে একটি বাড়ির নির্মাণকাজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরি জোয়ার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে পার্শ্ববর্তী পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তার প্রেক্ষিতে গত সোমবার বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিরোধ মিমাংসার কারণ দেখিয়ে রাতে ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোয়াদের কথা কাটাকাটি হলে বিষয়টি জোয়া ববি শিক্ষার্থীদের জানায়।
পরে ববি শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌছাঁলে বিএম কলেজের ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশালের প্রধান সমন্বয়ক দাবি করা রাফিকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপরই মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর বটতলা থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, এ ঘটনার পর রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী একটি বাস নিয়ে নগরীর বটতলা এলাকায় আসে। তখন বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও চালকসহ ১৫/২০ জনকে আহত করে।
এই হামলার খবর পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আরও সংঘটিত হয়ে অন্যদের বাঁচাতে কয়েকটি বাস-ট্রাক বোঝাই হয়ে বিএম কলেজে দিকে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে রড, পাইপ আর লাঠি দেখা গেছে
বিএম কলেজের গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক তিনটি হল এবং শ্রেণিকক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা বিএম কলেজের পাঁচটি বাস ভাঙচুর করে। পরে রাত পৌনে ৩টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় তারা।
এই সময় বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে রাতভর আটকে রাখে। পরে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে আটক শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়া হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. মুহসিনউদ্দীন বলেন, ‘আমরা একেক জনের কাছ থেকে একেক রকমের তথ্য শুনছি। তদন্ত না করে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে না।’
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ৮২ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত।