বর্তমানে দেশের স্বর্ণের বাজার অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, যেখানে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) গত তিন বছরে স্বর্ণের দাম ৮৮ দশমিক ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে, যা ৬৩ হাজার ৬৯৭ টাকায় পৌঁছেছে।
বর্তমান বাজার মূল্য:
২২ ক্যারেট: ১,৩৫,৬৬৪ টাকা
২১ ক্যারেট: ১,২৯,৫০৫ টাকা
১৮ ক্যারেট: ১,১০,৯৯৫ টাকা
সনাতন পদ্ধতি: ৯১,০৩৮ টাকা
মোট দাম সমন্বয়: ৪০ বার, ২৪ বার দাম বৃদ্ধি।
ব্যবসায়ীদের ক্ষতি: প্রায় ৭০% ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত।
বিশ্ববাজার মূল্য: ১ আউন্স স্বর্ণের দাম ২,৬৬০.৬৬ ডলার।
বিশ্ববাজারের প্রভাব
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামও বাড়ছে। ১ আউন্স স্বর্ণের দাম বর্তমানে ২ হাজার ৬৫০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল স্পট মার্কেটে এই দাম ২ হাজার ৬৬০ দশমিক ৬৬ ডলার পৌঁছেছিল। বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি ডলারের পরিবর্তে স্বর্ণ মজুত করছে, এবং বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফার আশায় স্বর্ণ কিনছেন।
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি: গত তিন বছরে ৮৮.৫১% বৃদ্ধি (৬৩,৬৯৭ টাকা)।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি
চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বর্ণের দাম উঠানামা করছে। ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, বাজুস মোট ৪০ বার দাম সমন্বয় করেছে। এর মধ্যে ২৪ বার স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সমন্বয়ের পর ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৪ টাকায় পৌঁছেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।
বাজারের অস্থিরতার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রভাব দেশের বাজারে পড়েছে। বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লে, তা দেশের বাজারেও প্রতিফলিত হয়। বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার পরিবর্তনের কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ছে।
ব্যবসায়ীদের অবস্থা
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীদের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। বাজুসের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতিতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে মাঝারি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন, কারণ তারা বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারছেন না। মাসুদুর রহমান বলেছেন, “ব্র্যান্ডের বড় দোকানগুলোর বিক্রি সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমে গেছে। ঊর্ধ্বমুখী দাম পুরো স্বর্ণ ব্যবসার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া
ক্রেতাদের জন্য এই পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান উচ্চমূল্যের কারণে দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের মতো, স্বর্ণও হয়ে পড়েছে দুষ্প্রাপ্য। ক্রেতারা জানান, উচ্চমূল্যের কারণে স্বর্ণ ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
মাজাহার নামে এক ক্রেতা বলেন, “সরকার বলেছিল, এবার ইলিশ রফতানি হবে না। তারপরও অনুমতি দেয়া হলো। এখন দেশে দাম বাড়ছে, সাধারণ মানুষের আর ইলিশ খাওয়ার উপায় নেই।” এই মতামতটি স্বর্ণের বাজারে ইলিশের সাপেক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এই পরিস্থিতিতে, ভোক্তাদের জন্য স্বর্ণ ক্রয় করা হয়ে উঠেছে একটি চ্যালেঞ্জ। বাজারের অস্থিরতা এবং বিশ্ববাজারের পরিবর্তনের কারণে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।