এবারে বৃষ্টি অতিমাত্রায় হওয়ায় মাঠে পানি জমেছে বেশী এবং সে পানি এখন পর্যন্ত শুকায়নি। অপরদিকে ঝড় ও দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়া ধানগুলো পেকে গেলেও তা কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত ধানগুলো না কাটলে তা পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাটোরের বড়াইগ্রামে এ বছর বোরো আমন ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। তবে আবাদে লক্ষ্যমাত্রা টপকানো ধান ঘরে তুলতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে ধান কাটার শ্রমিকের অভাবের কারণে।
ভালো ও সুষ্ঠু ধান কাটতে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও অতিবৃষ্টি, ঝড়, দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়ে যাওয়া জমির ধান কাটতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে কৃষি শ্রমিক। ফলে জমিতে নুয়ে পড়া ধান আদৌ কতটুকু ঘরে উঠাতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কিত কৃষককুল।
শনিবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষি শ্রমিকরা অধিকাংশই সোজা ধান কাটায় ব্যস্ত রয়েছে। কৃষি শ্রমিকরা জানান, ভালো জমিতে ধান কাটতে বিঘা প্রতি ৮ জন শ্রমিকের সময় লাগে ২ ঘন্টা। এতে মুজুরী পায় ৪৫০০ টাকা। সারা দিনে একজন শ্রমিক অন্তত ৩ বিঘা জমির ধান কাটতে পারে। কেউ কেউ ৪ বিঘার ধানও কাটে।
কৃষি শ্রমিকরা আরও জানায়, জমিতে জমে থাকা পানির মধ্যে সোজা ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কারণ এতে সময় বেশী লাগে। সময় বেশী লাগার কারণে ভালো জমিতে নুয়ে পড়া ধান কাটতেও একই রকম অর্থাৎ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
এতে ৮ জন শ্রমিকের সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। সবচাইতে সময় বেশী লাগে ও কষ্ট পেতে হয় পানি জমিতে নুয়ে পড়া ধান কাটতে। এতে সময় ব্যয় হয় প্রতি বিঘাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা। মুজুরী নেওয়া হয় জমির ধরণ বুঝে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।
উপজেলার বনপাড়া কালিকাপুর এলাকার কৃষি শ্রমিকদের সরদার হানিফ সেখ জানান, কৃষি শ্রমিকরা ৮ জন করে দলবদ্ধ হয়ে ধান কাটতে চুক্তিবদ্ধ হয়। কোন কোন সময় ৪ জনের বা ৬ জনের দলও তৈরি করে ধান কাটে।
সাধারণতঃ ভালো জমির সোজা ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৪৫০০ টাকা নেওয়া হয় এবং এ মুজুরী উপজেলার সকল জায়গার জন্য একই। শুধুমাত্র নুয়ে পড়া ধান কাটতে গিয়ে দরদাম করতে হয় কৃষকদের সাথে।
জমির ধরণ ও ধানের অবস্থান কেমন তা দেখে বিঘাপ্রতি ধান কাটার মুজুরী নির্ধারণ করা হয়। তবে ভালো জমিতে সোজা ধান কাটতেই আগ্রহ বেশী কৃষি শ্রমিকদের। ফলে শত শত হেক্টর নুয়ে পড়া পাকা ধান এখন অবদি মাঠেই পড়ে রয়েছে। সোজা ধান কাটার পর শ্রমিকরা তখন ওই ধানগুলো কাটতে আগ্রহী হবে।
উপজেলার জোয়াড়ি রামাগাড়ি এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, এবারে বৃষ্টি অতিমাত্রায় হওয়ায় মাঠে পানি জমেছে বেশী এবং সে পানি এখন পর্যন্ত শুকায়নি। অপরদিকে ঝড় ও দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়া ধানগুলো পেকে গেলেও তা কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত ধানগুলো না কাটলে তা পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহদি হাসান জানান, নুয়ে পড়া ধান সোজা করতে ‘লজিং আপ’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। তবে সকল কৃষকদের কাছে এ পদ্ধতির ধারণা বা কৌশল জ্ঞান হয়তো পুরোপুরি পৌঁছায়নি।
আবার অন্যদিকে ধারণা পেলেও তা চর্চা করেনি। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আরও বলেন, এই পদ্ধতি খুবই সোজা এবং সহজ। চার—পাঁচটা ধানের গোছা একসঙ্গে করে পাতা দিয়ে বেঁধে দিলেই তা দাঁড়িয়ে যায়। আর বাতাসে হেলে বা নুয়ে পড়ে না।
এই পদ্ধতি সহজ হলেও কৃষকেরা তা না করার কারণে অতি বৃষ্টি বা ঝড়ে বা অতি বাতাসে ধানগুলো নুয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এই নুয়ে পড়া ধান কাটতে মুজুরিতে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।
অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মারফুদুল হক জানান, এবারে উপজেলার ১৬ হাজার ২৪০ হেক্টর পরিমাণ জমিতে বোরো আমন চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ২৬ হেক্টর জমিতে।
ইতোমধ্যে ৩—৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবন্ধকতা না থাকলে এবারে বারো আমনের উদপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশের অধিক ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি অফিস।
তিনি আরও জানান, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছে যেনো সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমন ধান ঘরে তুলতে পারে।