ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট বিজয়-উল্লাসের দিনে চট্টগ্রামের ১৬টি থানার মধ্যে আটটিতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।
পাশাপাশি হামলার ঘটনা ঘটেছিল পুলিশ ফাঁড়ি, বক্সসহ পুলিশের ২৯টি স্থাপনায়। একইসঙ্গে থানা কম্পাউন্ডে থাকা বিভিন্ন ধরনের ৪৫টি যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার ১৬ দিন পরও ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে থানাগুলো। আসবাবপত্রসহ সংকটের পাশাপাশি রয়েছে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংকট। ইতোমধ্যে থানাগুলোর কার্যক্রম শুরু হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন থানা থেকে ৫০০টি অস্ত্র এবং ১২ হাজারের মতো গোলাবারুদ লুট হয়। এখনও উদ্ধার হয়নি ২২০টির মতো অস্ত্র। অস্ত্র-গুলি এবং যানবাহন ছাড়াও থানা ভবনের অবকাঠামো পুড়ে অন্তত ২১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যা পূরণ হতে সময় লাগবে।
পুলিশ জানিয়েছে, সরকার পতনের পর ছাত্র-জনতার বিজয়-উল্লাসের সময় কিছু বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের স্থাপনায় হামলা চালানোর পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় থানা, পুলিশ ফাঁড়ি এবং পুলিশ বক্সসহ ২৯টি স্থাপনা। স্থাপনাগুলোর মধ্যে আছে কোতোয়ালি থানা, পাহাড়তলী থানা, পতেঙ্গা মডেল থানা, ইপিজেড থানা, চান্দগাঁও থানা, ডবলমুরিং থানা, হালিশহর থানা, আকবর শাহ থানা ও সদরঘাট থানা। পাশাপাশি মধ্যম হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ি, বহদ্দারহাট পুলিশ বক্স, মোহরা পুলিশ বক্স, বায়েজিদ বোস্তামী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ি, টাইগারপাস পুলিশ বক্স, দামপাড়া ওয়াসা মোড় ট্রাফিক পুলিশ বক্স, সিটি গেট চেকপোস্ট, দামপাড়া পুলিশ লাইন, নিউমার্কেট মোড় ট্রাফিক পুলিশ বক্স, খুলশী ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। লুট হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। হামলায় পুলিশের ডাবল কেবিন পিকআপ, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপসহ ২৯টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ৩৫টি গাড়ি। লুট করে নিয়ে গেছে ১২টি মোটরসাইকেল।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিএমপির থানা এবং পুলিশ ফাঁড়িগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। আসবাবপত্র, যানবাহনসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলমান আছে। থানাগুলো ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ৫০০টি অস্ত্র ও ১২ হাজারের বেশি গুলি লুট হয়। এখনও উদ্ধার হয়নি ২২০টি অস্ত্র।’
পুলিশ আরও জানায়, অবকাঠামোর মধ্যে পাহাড়তলী থানায় ক্ষতি এক কোটি ৬০ লাখ, ইপিজেড থানার ক্ষতি ৭০ লাখ, পতেঙ্গা থানার ৮০ লাখ, হালিশহর থানার এক কোটি ৫০ লাখ, ডবলমুরিং থানার এক কোটি ২০ লাখ, চান্দগাঁও থানার এক কোটি ২০ লাখ, বন্দর থানার এক কোটি ৫০ লাখ, সদরঘাট থানার ৮০ লাখ এবং আকবরশাহ থানার ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফাঁড়িগুলোর মধ্যে পাথরঘাটা ফাঁড়ির ৮০ লাখ, সদরঘাট ফাঁড়ির এক কোটি, ইপিজেড ফাঁড়ির ৭০ লাখ, উত্তর হালিশহর ফাঁড়ির ৬০ লাখ এবং মোহরা ফাঁড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬০ লাখ টাকা।
র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উল আলম জানান, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে র্যাব। ইতোমধ্যে ৩৮টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এবং ২৯৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে সিএমপিতে জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত সময়সীমা মেনে ১৫ আগস্টের মধ্যে সিএমপিতে সব পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। সিএমপির সব থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে। সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাও স্বাভাবিক হয়েছে। সিএমপিতে পুলিশের ছয় হাজার ১৬৯ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলো স্বাভাবিক করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। কারণ বেশিরভাগের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র অনেকে এসে ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন। এখনও ২২০টির মতো অস্ত্র জমা হয়নি। আশা করছি, এসব অস্ত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে থানায় জমা হবে। অন্যথায় এসব অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’