ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তি খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকবে ভারত তার সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, এটা স্বীকার করে নিতে হবে। কিন্তু সরকারে যে থাকে, তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা হবে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দিল্লিতে রাষ্ট্রদূত রাজিব সিকরির ‘স্ট্র্যাটেজিক কনড্রামস : রিশেপিং ইন্ডিয়াস ফরেন পলিসি’ বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন জয়শঙ্কর।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পর বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। জয়শঙ্কর বলেন, স্বাভাবিক কারণেই সাম্প্রতিক অনেক আগ্রহের প্রেক্ষাপটে এ নিয়ে (বাংলাদেশ) কথা বলি। আপনারা সবাই জানেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উঠানামার মধ্য দিয়ে গেছে। আর সরকারে যে থাকে, তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের সম্পর্কের বিষয়টিকে পারস্পরিক স্বার্থের প্রেক্ষাপট থেকে দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। এরপর থেকে ভারতে রয়েছেন তিনি। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশটিতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। চরম গোপনীয়তার মধ্যে তিনি দেশটিতে অবস্থান করলেও তার বিষয়ে ভারত চূড়ান্ত কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানের ভিত্তি কী হবে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের শীর্ষপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। এর ভিত্তিতে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত তিনটি ‘অপশন’ বা রাস্তা খোলা আছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সামনে প্রথম রাস্তাটি হলো নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন এমন তৃতীয় কোনো দেশে শেখ হাসিনার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা।
দ্বিতীয়টি হলো ভারতে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’) দেওয়া। এর ফলে তিনি দেশটিতে আপাতত থাকার সুযোগ পাবেন।
আর তৃতীয় পথটি এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে দেশটির কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের মতে, কিছুদিন পর উপযুক্ত পরিবেশ ফিরলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে। কেননা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের শক্তি এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম পথটিই ভারতের কাছে সেরা অপশন তা নিয়ে অবশ্য কূটনৈতিক বা থিঙ্কট্যাঙ্ক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ শেখ হাসিনা ভারতে থেকে গেলে আগামীতে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় হস্তান্তরের অনুরোধ আসলে তা কোনো না কোনো যক্তিতে ভারত খারিজ করে দেবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়াটাকে পর্যবেক্ষকরা কোনো বাস্তবসম্মত ‘অপশন’ বলে মনে করছেন না।