কয়েক বছর ধরে টালিউডে কাজের সংখ্যা বেড়েছে ঢাকার শিল্পীদের। টালিউডের শিল্পীরাও নিয়মিত কাজ করছেন এ দেশে। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েন আর ভিসা জটিলতায় ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই বাংলার শিল্পীরা।
অনেক সিনেমার কাজ স্থগিত হয়ে পড়েছে, কেউ আবার নির্ধারিত সিনেমার কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ কাজ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন অনেকে।
ভিসা জটিলতার পাশাপাশি শিল্পীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে পরিচালক রাশিদ পলাশকে। তাঁর ‘তরী’ সিনেমায় অভিনয় করার কথা পশ্চিমবঙ্গের ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সিনেমার শুটিং পিছিয়ে দিয়েছেন পলাশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান এই নির্মাতা। রাশিদ পলাশ বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শুটিং পেছানো হয়েছে। তরী সিনেমায় ঋতুপর্ণার শুটিং ঢাকার বাইরে। দেশের এই পরিস্থিতিতে ভিসা জটিলতার পাশাপাশি তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে। কোনো কোনো কাজের শুটিং শুরু হলেও সার্বিক পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফেরেনি। আশা করছি, আগামী মাস নাগাদ সব ঠিক হয়ে যাবে। এরপর আলোচনা করে শুটিং শিডিউল করব।’
পশ্চিমবঙ্গের স্বস্তিকা মুখার্জিকে নিয়ে ‘আলতা বানু জোছনা দেখেনি’ ও ‘ওয়ান ইলেভেন’ নামের সিনেমা বানানোর কথা যথাক্রমে হিমু আকরাম ও কামরুল রিফাতের। পরিস্থিতি বিবেচনা করে দুটি সিনেমার শুটিং স্থগিত করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে আলতা বানু জোছনা দেখেনি সিনেমার শুটিং করার কথা ছিল স্বস্তিকার। তবে ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়ায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে শুটিং। নির্মাতা হিমু আকরাম বলেন, ‘চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে শিল্পীদের শিডিউল নেওয়া ছিল। ভিসা জটিলতাসহ নানা কারণে তা পেছানো হয়েছে। স্বস্তিকা মুখার্জির ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় তা হয়নি। আমাদের জানানো হয়েছে, শিগগির সব ঠিক হয়ে যাবে। এরপর আবার আবেদন করতে হবে। তখন নতুন করে শুটিং প্ল্যান করব।’
অক্টোবরে ওয়ান ইলেভেন সিনেমার শুটিং প্ল্যান করেছিলেন কামরুল রিফাত। এখন তা আর হচ্ছে না। কামরুল রিফাত বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শুটিং শুরুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। আমাদের সিনেমায় অনেক শিল্পী কাজ করবেন। তাঁদের নিয়ে কাজ করার পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। স্বস্তিকা মুখার্জিও আছেন। তাঁর ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসাপ্রক্রিয়ার একটি বিষয় আছে। তা এখন করা যাচ্ছে না। তাই কবে নাগাদ শুটিং শুরু করতে পারব, বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি ঠিক হলে শিল্পীদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন শিডিউল সাজাব।’
এদিকে চলতি মাসের শেষ দিকে শাকিব খানের সঙ্গে ‘বরবাদ’ সিনেমার শুটিং শুরুর কথা ইধিকা পালের। শাকিব খানের ভারতীয় ভিসা থাকায় কিছুটা চিন্তামুক্ত নির্মাতা মেহেদি হাসান হৃদয়। ইতিমধ্যে ভারতে পৌঁছেছেন নির্মাতা। যৌথ প্রযোজনার এ সিনেমার কিছু অংশের শুটিং বাংলাদেশেও হওয়ার কথা। দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি না হলে বিকল্প চিন্তা করতে হবে নির্মাতা ও প্রযোজকদের।
একই কারণে শঙ্কায় আছেন বাংলাদেশের শিল্পীরাও। ভিসা না পাওয়ায় টালিউডের ‘প্রতীক্ষা’ নামের সিনেমাটি ছেড়ে দিয়েছেন তাসনিয়া ফারিণ। অভিজিৎ সেনের পরিচালনায় মিঠুন চক্রবর্তী ও দেবের সঙ্গে অভিনয়ের কথা ছিল তাঁর। ফারিণ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভিসা পেতে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত নভেম্বর মাসে শুটিং শুরু করা না গেলে মিঠুন চক্রবর্তী ও দেবের শিডিউল পাওয়া যাবে না। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত আর এ সিনেমায় কাজ করা হচ্ছে না আমার।’
ভিসা না পাওয়ায় আটকে গেছে ‘ফেলুবকশি’ সিনেমায় পরীমণির ডাবিং। সিনেমার দৃশ্যধারণের কাজ শেষ করলেও ডাবিং বাকি এই অভিনেত্রীর। কিন্তু ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন তিনি। পরীমণি বলেন, ‘আমার আগের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন ভিসা পেতেও সমস্যা হচ্ছে। এখন কবে ভিসা পাব, কবে যেতে পারব, বুঝতে পারছি না।’
পরীর মতো একই সমস্যা শবনম বুবলীরও। ভিসার কারণে ‘ফ্ল্যাশব্যাক’ সিনেমার ডাবিংয়ে অংশ নিতে পারছেন না তিনি। রাশেদ রাহার পরিচালনায় এ সিনেমা দিয়েই টালিউডে অভিষেক হওয়ার কথা তাঁর।
দুশ্চিন্তায় আছেন কাজী নওশাবাও। দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামী মাসে পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাবে তাঁর ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’। তবে সিনেমার প্রমোশনে উপস্থিত থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। একই সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন অপূর্ব, সিয়াম, মিথিলা ও নুসরাত ফারিয়া। মুক্তির অপেক্ষায় আছে অপূর্বর ‘চালচিত্র’, সিয়ামের ‘প্রতিপক্ষ’, মিথিলার ‘মেঘলা’ ও নুসরাত ফারিয়ার ‘রকস্টার’ নামের সিনেমা। এসব সিনেমার প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার কথা তাঁদের।
এ ছাড়া অরিন্দম শীলের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ সিরিজে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মোশাররফ করিম। ‘ডিকশনারি’ ও ‘হুব্বা’ সিনেমার পর ব্রাত্য বসুর একটি নতুন সিনেমায় কাজ করার কথা তাঁর। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিডিউল ঠিক করতে পারছেন না মোশাররফ।
জানা গেছে, দুই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতারাও আগ্রহ হারাচ্ছেন বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে। সব মিলিয়ে দুই দেশের শিল্পীদের দুর্ভোগটা দীর্ঘায়িত হচ্ছে—এমনটাই মনে করছেন সিনেমাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।